Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Friday, November 30, 2018

পেশা হিসেবে মোবাইল সাভির্সিং


বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই বলতে গেলে এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। আর সে জন্যই বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে কয়েক হাজার মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার। প্রতিটি সেন্টারে প্রতিদিন গড়ে ৮-১০টি মোবাইল ফোন মেরামতের জন্য আসে। অবস্থাভেদে সার্ভিসিং সেন্টারগুলো মাসে কমপক্ষে ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার ব্যবসা করে। সে হিসেবে মোবাইল সার্ভিসিং সেক্টরের বাজার প্রায় হাজার কোটি টাকার। মোবাইল ফোন সেটটি ব্যবহারজনিত বিভিন্ন কারণে কিংবা অসাবধানতাবশত নষ্ট হতে পারে। তবে এতে চিন্তার কিছু নেই। কেননা ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েক হাজার মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। সুতরাং মোবাইল সেটের সুস্থতা নিয়ে টেনশন অনেকটাই কমে গেছে। ধীরে ধীরে মোবাইল সার্ভিসিং একটি পৃথক শিল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। মোবাইল সার্ভিসিংয়ের এই বিশাল সেক্টরটির যাত্রা শুরু হয় তারুণ্যের হাত ধরে। এই শিল্পে বর্তমানে যারা দক্ষ টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন তারা সবাই মূলত মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ দেখতে দেখতে শিখেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো যোগ্যতা না থাকলেও প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষার ওপরে ভিত্তি করে অর্জিত জ্ঞান লাভের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষ মোবাইল সার্ভিসিং টেকনিশিয়ান হিসেবে গড়ে তুলেছেন। গত কয়েক বছরে চাহিদার কারণে এই শিল্পের বিকাশ ঘটছে দ্রুতহারে। দ্রুত বর্ধনশীল এই শিল্প মূলত শহরকেন্দ্রিক। অবশ্য বর্তমানে শহরের উপজেলাতেও এখন মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে মোবাইল বিক্রির মার্কেটগুলোকে কেন্দ্র করেই মূলত মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। এই শিল্পের প্রসারে বিশ্বাসযোগ্যতাই মূলধন হিসেবে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ মোবাইল সেট নিখুঁতভাবে সার্ভিসিং করতে পারার মাধ্যমেই একটি মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টারের গ্রহণযোগ্যতা ব্যবহারকারীদের কাছে তাদের ব্যাপকভাবে পরিচিত করে তুলে থাকে।
প্রথমে কোনো ভালো প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত দু-তিন মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স করিয়ে থাকে। এ পেশায় ভালো করার জন্য এটিই যথেষ্ট নয়; সবচেয়ে ভালো হয় দেশের বাইরে থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারলে। প্রশিক্ষণের পর কোনো মোবাইল মেরামত কেন্দ্র বা সার্ভিস সেন্টারে ন্যূনতম ছয় মাস শিক্ষানবিশ থেকে কাজ করা উচিত। বাস্তব ও প্রায়োগিক জ্ঞানের জন্য এটা খুব দরকারি। এ পেশায় কাজ শুরু করার আগে হটগান মেশিন, স্ক্রু ড্রাইভার, টুইজার, ইলেকট্রিক আয়রন, ডিজিটাল মিটার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি কিনে নিতে হবে। পরিশ্রমী হলে এ পেশায় থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বা আরও বেশি আয় করা সম্ভব।
প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহক তাদের মোবাইল জনিত সমস্যার কারণে তাদের দারস্থ হন। আর সব ধরনের সেবা প্রদানেই প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের সাহায্য করে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভোক্তারা সফটওয়্যারজনিত সমস্যা নিয়ে এখানে আসেন। তবে হার্ডওয়্যারের সমস্যাও কম নয়। সফটওয়্যার সংক্রান্ত বেশিরভাগ সমস্যার ক্ষেত্রে শুধু সার্ভিসিং চার্জ নেয়া হয়। তবে হার্ডওয়্যার পরিবর্তনের জন্য সার্ভিস চার্জের পাশাপাশি পার্টসের মূল্যও পরিশোধ করতে হয়। শুধু সার্ভিস চার্জ ২০০ থেকে ৩০০, পাওয়ার না আসা ৩০০, লক খোলা ৩০০ থেকে ১০০০, ডিসপ্লে সমস্যা ৩০০, কান্ট্রিলক খোলা ৩০০ থেকে ৮০০, চার্জিং সমস্যা ৩০০ থেকে ৪০০, বাটন বা কি-প্যাড সমস্যা ২০০ থেকে ৪০০, রিংয়ের সমস্যা ৩০০ থেকে ৪০০, এন্টিভাইরাস ডাউনলোড ৩০০, প্যাকেজ ডাউনলোড ৫০০, মোবাইলের ক্যামেরা সমস্যা ১০০ থেকে ৪০০, ব্লুটুথ বা মাল্টিমিডিয়া ওপেন না হওয়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
গড়ে প্রতিটি সার্ভিসিং সেন্টারে এলাকা ভেদে সুনামের ওপর ভিত্তি করে ৮ থেকে ২৫ জন কাস্টমারদের সমস্যা সমাধান করে থাকে। সার্ভিস চার্জের বাইরে কাস্টমারদের খুচরা যন্ত্রাংশ কেনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়। তবে পার্টসের মতো সার্ভিস চার্জও মোবাইলে সেটটির কোম্পানিও মডেল ভেদে তারতম্য হয়ে থাকে। মোবাইলের কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে তা পরিবর্তনের জন্য পণ্যটির মূল্য মোবাইলের মডেলের সঙ্গে কমবেশি হয়ে থাকে।
 মোবাইল ট্রেনিং ইনস্টিটিউগুলোর অনেকাংশই আইনিক। দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা এ সব ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে সরাসরি ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে হাতে-কলমে বিভিন্ন মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যে কেউ অল্প কিছু দিনের মধ্যে নিজেদের দক্ষ টেকশিয়ান রূপে গড়ে তোলার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ খরচ ইনস্টিটিউট এবং প্রশিক্ষণ ভেদে আনুমানিক ৬ থেকে ২০ হাজার টাকা। এসব প্রশিক্ষণ সেন্টারে মূলত যে কোনো মোবাইলেরই হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার সংক্রান্ত সব ধরনের সমস্যা এবং সমাধানের উপায় সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোকে শর্ট কোর্স, ডিপ্লোমা এবং হায়ার ডিপ্লোমা রূপে বিভক্ত করে একজন প্রশিক্ষণার্থীর প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। একই মোবাইলে অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। তবে প্রশিক্ষণ সেন্টারগুলোতে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার দুই ধরনের প্রশিক্ষণই দেয়া হয়। কেননা ব্যবহারকারীরা হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এই দুই ধরনের সমস্যা নিয়েই সার্ভিস সেন্টারে আসেন। তাই প্রশিক্ষণ সেন্টারগুলোও তাদের কোর্সে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার কোর্স অন্তর্ভুক্ত রেখেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো মোবাইলে ব্লুটুথ এবং এর মাধ্যমে রিং টোন আদান প্রদান, এমপিথ্রি, ভিডিও, ইমেজ ডাউনলোড, সফটওয়্যার ইনস্টলেশন, মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার ইনস্টলেশন, মেমোরি কার্ড ডাউনলোড, মোবাইলের আনলক, ডাটাকেবল সমস্যাগুলো, হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে রেজিস্টার, ক্যাপাসিটার, ডায়েড, ট্রান্সফর্মগুলো, বিভিন্ন ধরনের সার্কিট এবং সেগুলোর কানেকশন ডায়াগ্রাম, সিকিউরিটি কোডসহ বিভিন্ন ধরনের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান টেলিকম বাজারের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, পেশা হিসেবে মোবাইল টেকনিশিয়ানের পদটিকে মোটেও খারাপ করে দেখার কিছু নেই। মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টারে ৩ থেকে ১০ জন দক্ষ মোবাইল টেকনিশিয়ানের চাকরির সুযোগ রয়েছে। সে হিসেবে বাংলাদেশে দক্ষ মোবাইল টেকনিশিয়ানের যথেষ্ট চাকরির সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল সার্ভিসিং ট্রেনিং নিয়ে যে কেউ স্বাধীন ব্যবসা হিসেবে স্বল্প পুঁজিতে সার্ভিসিং সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে জীবনে সফলতা আনতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages