পুষ্টিবিদের মতে মধু পানি পানের ১২টি দারুণ স্বাস্থ্য উপকারিতা
পানির অপর নাম জীবন। শরীরের সুস্থতার জন্য পানি খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের শরীরের প্রায় ৮০% পানি, যা আমাদের চিন্তার ও বাইরে। পানি আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ এবং ত্যাগ থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন স্থানের রক্ত চলাচল বহাল রাখে। কিন্তু এই পানিকে আরো অভিনব উপায়ে শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব। আর তা হচ্ছে পানির সঙ্গে মধু যোগ করে। যদি আপনি ভেবে থাকেন যে, মধুতে তো প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, তা কি স্বাস্থ্যর জন্য ভালো হবে? এমনটা ভেবে থাকলে চলুন জেনে নেই মধুপানির কিছু উপকারিতা-
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মনে রাখবেন আপনাকে নিতে হবে বিশুদ্ধ এবং জৈবগুণ সম্পন্ন মধু। এটি আপনার শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াসমূহকে ধ্বংস করে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়াসমূহকে বৃদ্ধি করে। এতে আছে প্রচুর এনজাইম, ভিটামিন এবং মিনারেল যা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখে।
২। গলা ব্যথা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে
মধুপানি গলা ব্যথার জন্য খুবই উপকারী। গলা ব্যথায় নিয়মিত মধুপানি পান করলে গলা ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়। তাছাড়া গলার স্বরের যত্নে আপনি পান করতে পারেন মধুপানি।
৩। আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে:
মধুর আশ্চর্যজনকভাবে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার বৈশিষ্ট্য আছে। আপনি যদি কাঁচা ও জৈব মধু খেতে পারেন, এতে এনজাইম পূর্ণ রয়েছে, ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। যুক্তরাজ্যের হারগেটে উপস্থাপিত মাইক্রোবায়োলজির স্প্রিং সম্মেলন সোসাইটির একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে , মানুকা (Manuka) মধু অ্যান্টি-বায়োটিকে থাকা জীবাণু ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। মধু একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহের খারাপ মৌলের সাথে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে ও আমাদের ত্বকের সমস্যা হ্রাস করে।
৪।গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে
যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য মধুপানি বেশ কার্যকর। যাদের পেট ফেপে থাকে, তারা এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খালি পেটে খেয়ে নিতে পারেন। এই মধুপানি গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ করবে। এটি আধঘন্টার মাঝেই আপনাকে আরাম প্রদান করবে।
৫। ঠান্ডা দূর করতে
মধুপানি গলা ব্যথা, কাশি, কফ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। মধুতে ঠান্ডা নিরাময় করার উপাদান আছে যা গলা থেকে কফ দূর করে থাকে। তাই ঠান্ডা লাগলে এক গ্লাস গরম মধু পানি পানের পরামর্শ বিশেষজ্ঞরা দিয়ে থাকেন।
৬। ওজন কমাতে
ওজন কমাতে মধু পানি জাদুর মত কাজ করে থাকে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস কসুম গরম মধু পানি পান করুন। সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি আপনার পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে থাকে। মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, যা আপনার ওজন বাড়াতে নয় বরং কমাতে সাহায্য করে। এটি সাধারণ চিনির চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। মধুপানি পান করলে ক্যালোরি ৬৪% পর্যন্ত রক্ষা করা সম্ভব। এছাড়া এটি চিনির প্রতি আসক্তি বা মিষ্টি খাবারের প্রতি আসক্তি যেমন কেক, চকলেট, কোলা থেকে আপনাকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
৭। কার্যশক্তি বৃদ্ধি
মধু হচ্ছে প্রাকৃতিক চিনি যা আমাদের দেহে এনার্জির সরবরাহ করে মধু দেহের মেদ না বাড়িয়ে। তাই প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস মধু পানি সারাদিনের কার্যশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
৮। ত্বক পরিষ্কার রাখে
মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা ত্বকের নানা সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৯। দেহের পানির পরিমাণ ঠিক রাখে
মধু পানি আপনার শরীরের পানি সরবারহ করে থাকে। ফলে সকালের এক গ্লাস পানি আপনার সারাদিনের পানির চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করে থাকে।
১০। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
মধুতে এনজাইম আছে যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। যদি আপনার হজমে সমস্যা থাকে তবে খাওয়ার পর এক গ্লাস কুসুম গরম মধু পানি পান করুন, দেখবেন হজমের সমস্য দূর হয়ে গেছে।
১১। অ্যালার্জিমুক্ত থাকতে সহায়তা করে
প্রতিদিন ১ গ্লাস মধু পানি অ্যালার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রতিদিন সকাল বেলা এক গ্লাস মধু পানি পানের ফলে দেহের পোলেন অংশগুলো যে সকল স্থানে অ্যালার্জির সংক্রমণ বেশি হয় সে সকল স্থানে একধরণের প্রতিরক্ষা পর্দার সৃষ্টি হয় যা সংবেদনশীলতা কমায় ও অ্যালার্জির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়। এক্ষেত্রে গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেতে হবে না। কাঁচা মধু বা যষ্টি মধু খেতে হবে। কাঁচা মধু আপনার এলার্জির সংবেদনশীলতা কমাতে সাহায্য করে। মধু শরীরকে জলয়োজিত করে বিভিন্ন এলার্জি থেকে রক্ষা করে।
১২। স্বরভঙ্গ প্রশমিত করে এবং কাশি দূর করে
মায়ো ক্লিনিকের মতে, গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে পান করলে, এটি গলদাহ বেদনা এবং জ্বালা করার বিরক্তি কমাতে সাহায্য করে। গরম পানি শুধু ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে, সাথে মধু মিশিয়ে ঠাণ্ডার সমস্যা কমে যায়। কখনও কখনও একটি গলদাহ থেকে কাশির জ্বালা সৃষ্ট হয়, তখন এই মিশ্রণ আপনার কাশি কমাতে সাহায্য করবে।
মধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা অবশ্যই প্রতিদিন সকালে গরম পানির সাথে মধু খাবার অভ্যাস করবেন।
সতর্কতা:
ডায়াবেটিস রোগীরা মধু পানি পান করা থেকে বিরত থাকবেন। যদি পান করতে চান তবে তা অল্প পরিমাণে। পরামর্শ দাতা: আনিকা শাহ্জাবিন
পুষ্টিবিদ খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments:
Post a Comment