Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Saturday, December 1, 2018

বৃষ্টি ভেজা দিন


সে কখন থেকে অঝর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে, এই বৃষ্টির মাঝে কত মানুষ কত ভাবে চলা-ফেরা করছে, কত গাড়ি কত ভাবে যাওয়া আসা করছে, তার কোন হিসাব নেই।
কিন্তু বৃষ্টির থামার কোন নাম গন্ধ নেই, বৃষ্টির এই রূপটা কে একটা ছেলে ও আরও অনেকেই উপভোগ করতে থাকে।
হঠাৎ দেখে বৃষ্টিতে একটা মেয়ে ভিজতেছে, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে; মেয়েটা ইচ্ছা করে ভিজছে না। তাই ধীর পায়ে মেয়েটার কাছে যায়, তারপর
ছাতাটা তার মাথার উপর ধরে রাখে যেন বৃষ্টি না পড়ে। মেয়েটা শরীরে বৃষ্টি না পড়াতে, সে চমকে ওঠে।
উপরে তাকাতেই নীল কালারের একটা ছাতা দেখে; পাশে ফিরতেই অবাক দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে বলে আমাকে চিনে না, জানে না, সাহায্য করছে!
ছেলেটা কে কিছু বলতে যাবে তখনেই হাতের ইশারায় একটা রিক্সা ডেকে দেয়। তাকে ইশারায় বলে রিক্সায় ওঠার জন্য।
সে ও তার কথা মত রিক্সায় ওঠে পড়ে, কিছু বলতে আর পারেনি। রিক্সা চলতে থাকে, মেয়েটা একটু পর পর ছেলেটা দিকে তাকাতে থাকে।
এক সময় ছেলেটার চোখের সামনে থেকে রিক্সাটা অদৃশ্য হয়ে যায়। মেয়েটার এ অবস্থা দেখে, একটা মুচকি হাসি দিয়ে তার পথে হাটতে থাকে।
এই ছেলাটার নাম হল তাওহীদ আর মেয়েটার নাম হল সাথী।
তাওহীদ তার দাদার অফিস দেখাশুনা করে, সে খুব রাগী ও অভিমানী ছেলে। তার বাবা নেই, সে ছোট থাকতেই তার বাবা মারা যায়। মা বেঁচে থেকেও নেই, কারণ অন্যের ঘরে চলে যায়।
তার আপন বলতে আছে একমাত্র দাদী। দাদীকে নিয়েই তার সুখে ও দুঃখে দিন গুলো কেটে যাচ্ছে।
আর সাথী কলেজে চাকরি করে, সে অনেক শান্ত ও ভদ্র মেয়ে। সে তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তার ছোট বা বড় কোন ভাই -বোন নেই। বাবা-মাকে নিয়ে ভালো ভাবেই তার দিন গুলো কেটে যাচ্ছে।
সাথী রাতে ঘুমাতে যাবে কিন্তু ঘুমাতে পারে না, বার বার বিকালের দৃশ্যটা তার চোখের সামনে ভেসে ওঠতে থাকে। মনে মনে বলে এক অচেনা অজানা ছেলে, আমাকে চিনে না, জানে না, সাহায্য করল!
আবার কি রকম একটা অদ্ভুদ আচরণ ও করল। এই আচরণটার জন্য একটা ধন্যবাদ ও দিতে পারলাম না। এসব চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে পাখির কিচির-মিচির শব্দে তাওহীদের ঘুম ভাংগে। তারপর নামাজ শেষ করে দাদীকে ডাকে
  • দাদী! দাদী! আমাকে এক কাপ চা দাও!
  • আর কত প্রতিদিন তোমাকে চা দিব দাদু ভাই? বুড়ো যে হয়ে গেছি; শরীরে শক্তি যে নাই। একটা বিয়ে সাদী করলে তো শান্তি পাই, আর একটা দাদু বোন এনে দেনা ভাই!
  • বিয়ে তো করতেই চাই, ভালো মেয়ে কোথায় পাই? পরে যদি মায়ের মত হয়ে যায়।
  • সব মেয়ে কি খারাপ! ভালো মেয়ে নাই?
  • মেয়ে তো আছেই কিন্তু তোমার মত মেয়ে কোথায় পাই!(দাদীর গালটা টেনে)
  • ওরে আমার দুষ্টু দাদু ভাই তারাতারি ওঠ অফিসের সময় যে নাই।
এভাবে প্রতিদিন সকালে দাদীর সাথে দুষ্টামি করে, তারপর সকালের খাবার খেয়ে অফিসে চলে যায়।
সাথীর যে কি হল বুঝতে পারছে না, আগে কখনো এরকম হয়নি। কোন ছেলে কে নিয়ে এত চিন্তা করেনি। এই প্রথম কোন ছেলের জন্য ঠিকমত ঘুম হয়নি। ঘুমটা ভাংতেই আবার সেই দৃশ্যটা মনে পড়ে যায়। তাহলে কি সে প্রথম দেখাতেই ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেল! কিন্তু তার মনটা উত্তর দিতে পারছে না।
নামাজ পড়ে আবার এটা নিয়ে চিন্তা করে, তারপর নাস্তা খেয়ে কলেজে চলে যায়।
এভাবে কয়েকদিন চলে যায়, কিন্তু অচেনা অজানা ছেলেটা কে ভুলতে পারছে না, আর তার দেখাও পাচ্ছে না।
বিকাল বেলা তাওহীদ বাড়ান্দায় বসে থাকে, এমন সময়
  • দাদু ভাই! একটা কথা বলব!
  • হুম
  • একটা বিয়ে কর কোনদিন মরে যায় তা তো জানি না। তোমাকে একটা লাল টুকটুকে বৌয়ের হাতে তুলে দিতে চাই! যে তোমাকে আমার থেকেও বেশি ভালবাসবে।
  • এটা কি বললে! মরে যাওয়ার কথা কেন বললে? কখনো বলবে না। বিয়ে!
  • দেখ ভাই সব মেয়ে খারাপ না, ভালো মেয়েও আছে।
  • হুম
  • হঠাৎ ঐ দিনের মেয়েটার কথা মনে পড়ে যায়। সে শুধু মেয়েটার চোখ দেখেছিল, কারণ মেয়েটা হিজাব পড়া ছিল। তার দিকে বার বার তাকিয়ে ছিল আর চোখের পলক ফেলেছিল।
    • দাদু ভাই কি হল!
  • কিছু না
  • হুম বুঝতে পারছি।
  • হুম(মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যায়)
  • একদিন তাওহীদ রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাচ্ছে; এমন সময় অফিস থেকে ফোন আসে। সে চলে যেতে থাকে, সাথী রেস্টুরেন্টে ডুকতে থাকে, কিন্তু কিছু বলার আর সুযোগ পায়নি। মনে মনে বলে আজকেও ধন্যবাদ টা দিতে পারলাম না।
    সাথী বিকাল বেলা দোলনায় দোল খেতে থাকে, আর চিন্তা করতে থাকে। কারণ ছেলেটা তার রাতের ঘুম হারাম করেছে, মনে যে একটা শান্তি ছিল সেটাও নষ্ট করেছে, শুধু তার কথা ভাবতে ভালো লাগে। মনে মনে বলে কে এই ছেলে? কোথায় থাকে? তাকে কোথায় খুঁজবে? কোথায় পাবে!
    সাথীর মন খারাপ, মন খারাপ থাকলেই পার্কে আসে, তারপর কিছুক্ষণ ঘুরাফেরা করে বাসায় চলে যায়।
    এই জীবনে সে অনেক প্রেমপত্র ও প্রপোজ পেয়েছে, কিন্তু কাউকে মনে ধরেনি। তাই মনের জায়গাটাও কাউকে দেয়নি।
    কিন্তু এই ছেলেটাকে দেখার পর থেকেই, সে অন্যরকম হয়ে গেছে। এসব চিন্তা করতে করতে কখন যে, আকাশ টা মেঘলা হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি।
    তার একটা বদ অভ্যাস আছে; বৃষ্টির দিনে ছাতা সাথে রাখতে ভুলে যায়।
    অঝর ধারায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করে, সে দৌড়ে রাস্তায় যায় রিক্সা করে বাসায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু সময় টা ছিল অসময় তাই রিক্সা পায়নি।
    হঠাৎ বুঝতে পারে তার শরীরে বৃষ্টি পড়ছে না, পাশে ফিরতেই দেখে সেই নীল কালারের ছাতাটা ধরে অচেনা ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।
    (তাকে পেয়ে কত যে খুশি হয়েছে, তা বলে বুঝানো যাবে না)
    তাওহীদ গিয়েছিল ফোনে টাকা ভরতে,
    তারপর হাতের ইশারায় বলে তার সাথে আসতে, সাথী হাটতে থাকে আর মনে মনে বলতে থাকে, কি অদ্ভুদ ছেলেরে বাবা একটা কথা বলতেও তো পারে! নাকি কি কথা বলতে পারে না! পাঁচ মিনিট পর বাসার সামনে চলে আসে।
    বাসার দিকে তাকাতেই তার চোখ গুলো জুড়িয়ে যায়। কারণ বাসার সামনে বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছে ভরা ছিল। তার সাথে ভয়ে ভয়ে ভিতরে যেতে থাকে, কলিং বেল টা টিপ দিতেই তার দাদী দরজা টা খুলে দিয়ে ভিতরে যেতে থাকে।
    • দাদী! বলে ডাক দিতেই(পিছনে ফিরে তাকায়)
    এ দিকে সাথী অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে, মনে মনে বলে এতক্ষণ কি চিন্তা করলাম আর এখন কি হল!
    • সাথীর দিকে ভ্রু কুচকে বলে এটা কে দাদু ভাই! এমন সময় হা-হা-হা হাঁচ্চু, সাথী হাঁচি দেয়।
  • চিনি না(কথাটা শুনে সাথী গাল ফুলিয়ে দেয়) বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিল, আর রিক্সাও পাচ্ছিল না, দেখেও মনে হচ্ছিল তার ঠান্ডা লেগে যাচ্ছিল তাই নিয়ে আসলাম।
  • হুম বুঝেছি।
  • হা-হা-হা হাঁচ্চু( আবার হাঁচি দেয়)
    তার দাদী সাথীকে নিয়ে রুমে চলে যায়, সে ও তার রুমে চলে যায়। রুমে যাওয়ার পর ও হা-হা-হা হাঁচ্চু দেয়।
    কিছুক্ষণ চুপ থেকে সাথী বলে
    • আপনাকে দাদী বলে ডাকি!
  • আমি কি মানা করেছি।
  • মনে মনে বলে (যেমন নাতি তেমন দাদী )
    একটা কালো শাড়ি সাথীকে দিয়ে বলে কাপড় টা পড়ে নাও।
    সাথী মাথা নাঁড়ায়
    কিছিক্ষণ পর ডাক দেয় খাবার খেতে। সবাই এক সাথে খাবার খেতে বসলে; সাথী একটু পর পর তাওহীদের দিকে তাকাতে থাকে। এই বিষয় টা তার দাদী লক্ষ করে, তাওহীদ শুধু একবার সাথীর দিকে তাকিয় দেখে তার মুখে এখন হিজাব নেই। কারণ আসার সময় যে হিজাব পড়া ছিল, তার চোখ গুলো ও চিনা চিনা লাগছিল কিন্তু কোথায় দেখছে মনে করতে পারছে না।
    সাথী চলে যাওয়ার সময় তাকে দুইটা ধন্যবাদ দেয়। সাথী বলে ঐ দিনের জন্য ও আজকের জন্য বুঝছেন! সে মাথা নাঁড়ায়(মনে মনে বলে এখন মনে পরছে কোথায় দেখেছিলাম)
    দাদীকে বলে যায়, মাঝে মাঝে আসবে।
    এদিকে সাথীর বাবা-মা ও তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু সে বলে তাকে আরও কিছুদিন সময় দেওয়ার জন্য।
    তারপর থেকে মাঝে মাঝে তাওহীদদের বাসায় যেত। দাদীর সাথে গল্প করে চলে আসত; কখনো তাওহীদের সাথে দেখা হত, আবার কখনো দেখা হত না।
    দেখা হলেই একটা মুচকি হাসি দিত, ভাল-মন্দ জিজ্ঞাসা করত সে ও উত্তর দিত। ধীরে ধীরে সাথীর প্রতি একটা ভাললাগা কাজ করতে শুরু করে।
    কিছু দিনের মাঝেই দাদী ও তার সাথে একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক সময় ফোনেও টুকটাক কথা শুরু হয়। তাওহীদ কখন কি করে না করে সাথী সব সময় তার খবরা-খবর রাখত; তাওহীদের ও ভালই লাগত। মেয়েদের প্রতি যে একটা ঘৃণা ছিল, সেটা সাথীর প্রতি ছিল না।
    কারণ সাথীর আচার-আচরণ, চাল-চলন, পর্দা মেনে চলা ইত্যাদি সব কিছুই তার কাছে ভালো লাগত। অল্প কয়েক দিনের মাঝেই তাদের মাঝে একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তাদের দিন গুলি ভাল ভাবেই চলতে থাকে, এদিকে রমজান মাস ও চলে আসতে থাকে।
    একদিন সাথী তাকে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বলে, এই দিনেই সাথী একটা ভুল করে ফেলে। ভুল টা হল
    খাবার খেতে থাকে টুকটাক কথা বলতে থাকে, হঠাৎ মজা করে বলে তাওহীদ চল আমরা কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি এবং দুজনে মিলে আলাদা কোথাও থেকে, সুখের সংসার শুরু করি।
    কথাটা এমনেতেই বলেছে, দেখতে চায় সে কি বলে! কিন্তু আবার ভয় ও পাচ্ছে; মনে মনে বলে মজা করে তো বলে ফেললাম! যে রাগী ছেলে আমার কথাটা কিভাবে নিবে কে জানে! আর এখন কি বলে কে জানে?
    কিন্তু তাওহীদ ঠিকেই উল্টাটা বুঝে, মনে মনে বলে সব মেয়ে এক মেয়েদের কে আমার চিনা হয়ে গেছে।
    সব সুখের পাগল, দুঃখের পাগল কেউ হতে চায় না। তার রাগ ওঠে কারণ কোর্টে বিয়ে করার কথা কেন বলল? সবাই কে না জানিয়ে বিয়ে করবে এ কথা কেন বলল? আলাদা থাকার কথা কেন বলল?
    কিন্তু সাথী যে মজা করে বলেছে, সেটা বুঝেনি। সাথীকে আর কিছু বলার সুযোগ ও দেয়নি। সাথী কে বলে
    • যদি কখনো আবার বৃষ্টি হয়! আমি ফোন দিব এর আগে কখনো আমাকে ফোন দিবেন না, দিলে ভাল হবে না।
    এ কথাটা শুনে সাথী স্তব্ধ হয়ে যায়। কিছু একটা বলবে যে তার চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু এ কথা যে বলবে বুঝতে সেটা পারেনি। তার চোখ দুটো জলে ভিজে যাচ্ছে।
    দুজন দাঁড়িয়ে আছে প্রথম যে জায়গাটাতে দেখা হয়েছিল সেই জায়গাটাতে। অঝর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে, হঠাৎ তাওহীদ বলে
    আজ থেকে আমাকে ভুলে যান। মনে করবেন আমি আপনার অপরিচিত এবং আমি ও মনে করব আপনি অপরিচিত।
    সাথী কি বলবে বুঝতে পারছে না, চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে আছে; আর তার কথা শুনছে।
    এই জায়গাটাতেই তো আমাকে দেখেছিলেন এবং চিনেছিলেন? এখন এই জায়গাটা থেকে আমাকে ভুলে যাবেন।
    কিন্তু সাথীকে কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছে না, সে তার মত কথা বলেই যাচ্ছে।
    কথাটা শুনে মনে হচ্ছে তার স্বপ্নের আকাশটা ভেংগে যাচ্ছে। তার বুকের মাঝে একটা চিন চিন ব্যথা অনুভব করছে। চোখ দুটো জলে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। তাওহীদ চলে যেতে থাকে, সে ভেজা ভেজা চোখে তাকে দেখতে থাকে, এক সময় অদৃশ্য হয়ে যায়।
    সাথী সব সময় মন মরা হয়ে থাকে, বাসায় ও কলেজে কোন জায়গাতেই ভালো লাগে না। ক্লাসেও ঠিক মত করাতে পারে না, সব সময় অন্য মনস্ক হয়ে পড়ে।
    তাই অনেক সময় ক্লাস ফেলে চলে আসে। কেউ জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলতে পারে না, চোখে শুধু্ পানি ছল ছল করে। বাসায় বাবা-মা জানতে চাইলে চুপচাপ থাকে।
    এদিকে তাওহীদ ও একটু অন্যরকম হয়ে যায়। দাদী যদি সাথীর কথা জানতে চায়! তাহলে বলে আমি জানি না, কোথায় আছে কি রকম আছে। দাদী বুঝতে পারে তাদের মাঝে কিছু একটা হয়েছে।
    দেখতে দেখতে মাহে রমজান চলে আসে এবং চলতেও থাকে, রোযা রাখে, নামাজ পড়ে, কুরআন তিলাওয়াত করে কিন্তু মনের মাঝে যে একটা শান্তি ছিল তা কেউ পায় না।
    সাথী নিজের সাথে যুদ্ধ করে আর পারে নি তাওহীদের কথা রাখতে, চলে আসে তার দাদীর কাছে তার সম্পর্কে জানতে। কলিং বেল টিপ দিতেই দাদী দরজা খুলে, সাথে সাথে দাদীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
    দাদীকে তার কথা বললে, দাদী বলতে থাকে
    দাদু ভায়ের বাবা মারা যায়, সে ছোট থাকতেই। তার মা নিজের সুখের চিন্তা করে চলে যায়, তাকে একা ফেলে।
    মায়ের এমন ঘটনার জন্য ছোট থেকেই সে আর কোন মেয়েকে দেখতে পারে না। কারও সাথে কথা বলতে পছন্দ করে না। কিন্তু কোন মা-বোন বিপদে পরলে সাহায্য না করে থাকতে পারে না। যেমন টা তোমাকে করেছিল।
    কিন্তু তোমাকে দেখার পর থেকে, তার এই ধারনাটা পাল্টাতে থাকে। সে বলত দাদী সব মেয়েই খারাপ না তাই না! আমি হ্যাঁ বলতাম। সে আরও বলেছিল সাথীকে তোমার কেমন লাগে? তাকে কি এই ঘরে আনা যাবে! আমি বলেছিলাম রমজানে তার বাবা-মার সাথে কথা বলে; ঈদের পরে নিয়ে আসব এই ঘরে
    • কিন্তু তুমি এটা কি করলে! তাকে না জেনেই মজা করে উল্টা-পাল্টা বলে ফললে !
  • দাদী আমাকে ক্ষমা করে দাও! সে যে এরকম রাগ করবে, আমি বুঝতে পারিনি। পরে আমাকে কিছু বলার ও সুযোগ দেয়নি।
  • আমি ক্ষমা করার কে! যে করবে তার কাছে যাও।
  • আর মজা করে কেন ঐ দুইটা কথা বলতে! সে জন্যই তো সে রাগ করেছ।
    তখন দাদীর পায়ে পড়ে কাঁদতে থাকে।
    • ওঠো ওঠো দেখি কি করতে পারি। চল চল তোমার বাসায় যায়, তোমার বাবা-মার সাথে কথা বলে বিয়ের তারিখ ঠিক করি।
    সাথী একটা হাসি দিয়ে দাদীকে ধরে কেঁদে ফেলে। দাদু ভাইকে ছেড়ে দিলে খবর আছে।
    তারপর সাথীর বাবা-মার সাথে কথা বলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলে।
    তার দুইদিন পর তাওহীদ সেহেরী খেয়ে ঘুমাতে থাকে। সকালে সাথী ডাকে তার ঘুম ভাংগে, ঘুম ঘুম চোখে সাথীকে দেখে মাথা গরম হয়ে পড়ে।
    সাথী তার হাত ধরে বলতে থাকে, আমাকে ক্ষমা করে দাও! আমি বুঝতে পারিনি। তার এ কান্ড দেখে তাওহীদের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। সাথে সাথে মারে এক চর, চর খেয়ে দরজার সামনে গিয়ে পড়ে।
    দাদী এসে দেখে সাথী কাঁদতেছে, গালটাতে দেখে পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে।
    দাদী বলে সাথীকে মারলি!
    • বেশ করেছি, তাকে আসতে কে বলেছিল? আমি তো না করেছিলাম। বাসায় আসলো কেন? আমাকে ডাকলো কেন?
  • আমি বলেছি
  • দাদী!
  • হুম
  • এখান থেকে যাও তোমার সাথে কথা নেই। তখন সাথীকে নিয়ে চলে যায়, জানে এখন কথা বলে লাভ নেই।
    এক সময় তাওহীদ তার রুমে ল্যাপটপ নিয়ে অফিদের কাজ করছে, হঠাৎ সাথীকে সোফায় দেখতে পায়। দেখে এই কয় দিনে সাথীর চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে, কি রকম যেন একটা রোগা রোগা ভাব চলে এসেছে। তার হাতের রেখা গুলো এখনো গালটা তে আছে।
    সাথীকে এরকম দেখে তার মনটা ও কেঁদে ওঠে, কারণ সে ও তো সাথীকে ভালবেসে ফেলেছে, ভালবাসার মানুষ কে কি কষ্ট দেওয়া যায়! সে তো না বুঝে বলে ফেলেছিল আর সে তো এটা মজা করে বলেছিল, তার জন্য তো এখন ক্ষমাও চেয়েছে।
    আজকে দাদীর সাথে ইফতারি করেনি,
    দাদীকে বলেছিল তার রুমে দিয়ে যেতে। ইফতারি করে, নামাজ পড়ে, ছাঁদে দাঁড়িয়ে সাথীর জন্য কিনা নুপুর নিয়ে চিন্তা করতে থাকে।
    কিছুক্ষণ পর সাথী এসে দাঁড়িয়ে থাকে
    • এখানে কেন এসেছেন?
  • … (কথা বলেনি)
  • কি হল আমি তো কিছু বলেছি!
  • সাথী কাঁদতে থাকে।
  • এই মেয়ে কাঁদবেন না।
  • কান্না আরও বাড়িয়ে দিয়ে বলে আমাকে আর কষ্ট দিয়েন না, আপনার দেওয়া কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমাকে শেষ বারের মত ক্ষমা করে দিন! কখনো এরকম ভুল করব না। (এমন সময় বৃষ্টি পড়তে শুরু করে)
  • এই মেয়ে কাঁদতে না করছি না? না কি আর একটা খাবেন! আমি না করেছিলাম বলে এতদিন আসেন নাই! তাহলে এখন কেন আসলেন?আগে কোথায় ছিলেন?
  • ভয়ে আসতে পারেনি। আর আপনিই তো বলেছিলেন আসলে ভালো হবেনা।
  • যাকে ভালবাসেন তার কাছে আসতে ভয় পান! তাহলে এখন চলে যান।
  • আর এখনো কি ভালো হয়েছে!
    • এখন কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে
    মারছেন তাও হয়নি! আবার ঝগড়াও করছেন।
    • তাই!
  • হুম(গাল ফুলিয়ে)
  • তারপর সাথীর মাথাটাকে তার বুকে জায়গা করে দেয়। কেঁদে কেঁদে বলে এত জুড়ে কেউ মারে ? ব্যথা পায়নি? ঐদিন যে মজা করে বলেছিলেন এবং সবাই কে একা রেখে থাকতে বলেছিলেন
    • আপনার পা টা দেখী
  • কেন?
  • পায়ে ধরে ক্ষমা চাব তাই
  • কি!
  • যেটা বলছি সেটা করেন
  • পাটা বাড়িয়ে দিতেই নুপুর গুলো পায়ে পড়িয়ে দেয়। সাথীর আনন্দে চোখে পানি পানিব এসে পরে।
    তার দাদী ছাদে আসে তাদেরকে ডাকতে, এসে এই দৃশ্য দেখে তার চোখে পানি এসে পড়ে। মনে মনে এত দিনে একটা মেয়ে পেল তার মনের মত করে। তারপর বলে
    • আপনাদের প্রেম কাহিনীটা শেষ হলে আমি কিছু বলতে পারি! এ কথা শুনে সাথী লজ্জা পায়।
  • বলতে পারেন আমরা কি মানা করছি!
  • হবু বউকে পেয়ে দাদু ভাই আমাকে ভুলে গেলেন? আপনাদের প্রেম দেখে আমার ও প্রেম করতে ইচ্ছা করছে।
  • ভুলি নাই দাদী, আসেন বৃষ্টিতে ভিজে প্রেম করি।
  • তখন সবাই এক সাথে হেসে ওঠে।
    তারপর কি হয়!
    ঈদে সকলে মিলে আনন্দ করে,ঈদের পর তাদের কে এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে।
    এভাবে বৃষ্টি ভেজা ভালবাসা দিয়ে শুরু হয়, এক নতুন পথ চলা
    বিদ্র: কিছু কিছু সময়ে, কিছু কিছু মজার কারণে, অনেক সময় একটু ভুল বুঝাবুঝির কারণে, অনেক ধরণের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আমরা শুনতে চাই না, জানতেও চাই না মূলত বিষয় টা কি ছিল।
    তাই আমাদের উচিত প্রথমে সঠিক ভুল বিচার করা, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া।

    No comments:

    Post a Comment

    Post Top Ad

    Your Ad Spot

    Pages