আয়ুর্বেদ, উনানী এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চায়নিজ মেডিসিনে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক উপাদানটির নাম হলো তোকমার বীজ বা তোকমা (Basil Seeds). তোকমা হলো Ocimum Sanctum ঘরানার উদ্ভিজ উপাদান। যা বিভিন্ন ধরণের পানীয় ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দেখতে একেবারেই সাদামাটা এই উপাদানটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, আঁশ এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরি।
সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা দূর করার জন্যে তোকমা খুব ভালো কার্যকরী একটি উপাদান। অনেকেই নিয়মিত তোকমার শরবত পান করে থাকেন। তবে যারা এখনও তোকমা গ্রহণ করা শুরু করেননি, তারাও দ্রুত কিনে ফেলুন তোকমা। কারণ, এই একটি মাত্র উপাদানের অগণ্য গুণাগুণ কোনোভাবে এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ হবে না আপনার।
পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে
তোকমার বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হলে সেটা ফুলে, বড় হয়ে তার শরীরের বাইরের আবরণে জেলী জাতীয় পদার্থ তৈরি করে। এটাই খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও, তোকমাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, খাদ্যকে দ্রুত পরিপাক হতে সাহায্য করে থাকে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, ডায়রিয়া অথবা আমাশয়ের মতো পেটের সমস্যাতে তোকমার বীজ খুবই উপকারী। এছাড়াও তোকমা বীজের তেল গ্যাস্টিক আলসার সমস্যার জন্যে উপকারী একটি উপাদান।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
প্রোটিন, আঁশ, বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় তোকমার বীজে। তোকমা গ্রহণের ফলে ক্ষুধাভাব কমে যায় অনেকটা। যার ফলাফল স্বরূপ ওজন চলে আসে নিয়ন্ত্রণের মাঝে। যেহেতু তোকমাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, যা পেট ভরা ভাব তৈরি করে থাকে। এর ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের প্রতি ইচ্ছা তৈরি হয় না।
সকালে অথবা বিকালের নাস্তায় তোকমা খাওয়ার ফলে শরীর তার প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পায়। যার ফলে পেট ভরা থাকে এবং শরীরে শক্তি সঞ্চিত হয়। এছাড়াও, নাস্তা হিসেবে তোকমা খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে।
ঠাণ্ডা-কাশির সমস্যা দূর করতে
পার্সিয়ান হার্বাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা প্রায় একশ বছর ধরে একদম সাধারণ ঠাণ্ডা-কাশির সমস্যা থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টের মতো গুরুত্বর সমস্যার ক্ষেত্রেও তোকমা ব্যবহার করে আসছেন। তোকমা বীজে রয়েছে অ্যান্টি-স্পাজমোডিক (Antispasmodic) প্রভাব। যা উক্ত সমস্যার দূর করতে কার্যকরী। তোকমাতে থাকে অ্যান্টি-ফাইরেটিক (Antipyretic) জ্বর কমাতে সাহায্য করে থাকে।
তোকমাতে রয়েছে কেমোপ্রিভেন্টিভ উপাদান সমূহ
তোকমা বীজে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় লাইনলিক অ্যাসিড এবং ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যক্রম কেমোপ্রভেন্টিভ (Chemo preventive) হিসেবে কাজ করা। টিউমারযুক্ত ইঁদুরদের উপরে একটি গবেষণায় করা হয়। যেটা থেকে দেখা যায়, তোকমা গ্রহনাকারী ইঁদুর তুলনা মুলকভাবে বেশী দিন বেঁচে থাকে এবং তাদের টিউমারের বৃদ্ধির গতি কমে যায় অনেকখানি।
প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে
তোকমা বীজে থাকা প্রদাহ-বিরোধী উপাদান সমূহ যেকোন ধরণের প্রদাহ কমাতে কাজ করে। শরীর কোন আংশ ফুলে যাওয়া অথবা ব্যথাভাব দেখা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এটা কাজ করে থাকে। আয়ুর্বেদ থেকে জানা যায় যে, আর্থ্রাইটিসের সমস্যার জন্য শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে গেলে সেটা কমিয়ে আনতেও তোকমা দারুণ কার্যকরী।
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য এবং দুশ্চিন্তা কমাতে কাজ করে
তোকমাতে থাকা অ্যান্টি-হাইপারলিপিডেমিক (Antihyperlipidemic) কার্যক্রম কোলেস্টেরল এর সমস্যা কমিয়ে থাকে। তোকমা বীজের তেল লক্ষণীয়ভাবে হাই লিপিড প্রোফাইল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। এছাড়াও আয়ুর্বেদে দুশ্চিন্তা কমাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তোকমা।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
তোকমা বীজে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভনয়েড এবং ফেনোলিক উপাদান সমূহ। একইসাথে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সমূহ থাকার ফলে তোকমা গ্রহণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায়। একইসাথে, ফ্রি-রেডিক্যাল ড্যামেজ থেকে রক্ষা করতেও বেশ উপকারী তোকমা।
মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে
প্রদাহ-বিরোধী উপাদান সমূহ থাকার ফলে মুখের ভেতরের প্রদাহ, ইনফেকশন, আলসারসহ বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় তোকমা দারুণ কাজ করে থাকে। তোকমাতে থাকা অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান সমূহ থাকার ফলে মুখের ভেতর একদম ফ্রশ থাকে। বিশেষ করে মুখের ভেতর কোন ইনফেকশন, দাঁতের ক্ষয় রোগ (ক্যাভিটিজ) এবং মুখের দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে না।
তোকমা গ্রহণে কিছু নিয়ম ও সতর্কতা
তোকমা বীজ কীভাবে গ্রহণ করা উচিৎ এবং কাদের গ্রহণ করা উচিৎ সেটা অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না। সকলের এটা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা প্রয়োজন। কারণ, ভুল উপায়ে তোকমা গ্রহণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সতর্কতা: তোকমা অবশ্যই ৭/৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর ফুলে উঠলে তারপর সেবন করুন।ঠিক মত ফুলে না উঠলে পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে। সারারাত ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে এই পানি খেতে পারেন। সাথে ১ চা চামচ খাঁটি মধু যোগ করতে পারেন। বিঃদ্রঃ শরবতে ইসবগুলের ভুসি ও তোকমা দানা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে শরবতের ঔষধি গুণ বৃদ্ধি পায়।
তোকমা খাওয়ার পূর্বে তোকমা বীজ পানিতে ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজগুলো একদম বড় হয়ে ফুলে উঠলে এরপর সেটা খাওয়া যাবে।
– শিশুদের তোকমা বীজ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু এটা বেশ পিচ্ছিল হয়ে যায় ভেজানোর পর।
– গর্ভবতী নারীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তোকমা গ্রহণ করা উচিৎ।
– প্রতিদিন তোকমা বীজ খেতে চাইলে এক চা চামচ গ্রহণ করাই যথেষ্ট।
স্বাস্থ্যকর তোকমার শরবত
গরমের প্রশান্তির জন্য তোকমার শরবত খুবই উপাদেয়। এ ছাড়া শরবত পান করলে দূর হবে ক্লান্তি ও কোষ্ঠকাঠিন্য। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তারা রোজ সকালে এই শরবত পান করলে উপকৃত হবেন।
উপকরণ:
(এক গ্লাসের জন্য)
১. দুধ (আধা গ্লাস)
২. পানি (আধা গ্লাস)
৩. চিনি দুই টেবিল চামচ
৪. তোকমা এক চা চামচ
৬. বরফ কুচি পরিমাণমতো (ঠান্ডা পান করতে চাইলে)
প্রণালি:
প্রথমে পানি ও দুধের মধ্যে তোকমার দানা পাঁচ-ছয় মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এবার চিনি দিতে হবে। ঠান্ডা ঠান্ডা পান করতে হলে শরবতে বরফ কুচি দেওয়া যেতে পারে। সব উপকরণ দিয়ে ভালভাবে নাড়ুন। হয়ে গেল তুকমার শরবত। এবার পরিবেশন করুন। বিঃদ্রঃ তবে তোকমা অন্তত বেশ কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর ফুলে উঠলে তারপর সেবন করা উত্তম। ঠিক মত ফুলে না উঠলে কারও কারও পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে। তাই আপনি আগে থেকে তোকমা দানা ভিজিয়ে রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
-------------------------------------------------------------------------------------------
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তোকমা দানা রাখুন, অবিশ্বাস্য ফলাফল
তোকমা (ইংরেজি: pignut বা chan,) (বৈজ্ঞানিক নাম: Hyptis suaveolens) এক প্রকার গুল্ম জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ। একে ‘বিলাতি তুলসি’, ‘গাঞ্জা তুলসি’ ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।
তোকমার আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ক্রান্তীয় অঞ্চল। এটি সাধারণতঃ ১–১.৫ মি (৩.৩–৪.৯ ফু) লম্বা হয়; কখনো কখনো এটি ৩ মি (৯.৮ ফু) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর কান্ড রোমশ এবং প্রস্থচ্ছেদ বর্গাকার। এর পাতা দ্বি-পার্শ্বীয়, ২–১০ সেমি (০.৭৯–৩.৯৪ ইঞ্চি) লম্বা, কিনারা অগভীর খাঁজকাটা। পাতা থেঁতলানো হলে উগ্র গন্ধ বের হয়। এর ফুল বেগুনি বা গোলাপি, গুচ্ছফুল।
ছোট কালো রঙের একটি বীজ তোকমা, যা মূলত বিভিন্ন মিষ্টি পানীয় কিংবা শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও তোকমা বীজ অন্যতম একটি উপাদান। এটি স্থানভেদে সবজা বীজ, মিষ্টি বাসিল, ফালুদা বীজ কিংবা তুর্কমারিয়া বীজ হিসেবে পরিচিত। বহু গুণ রয়েছে বীজটির।
ওজন কমাতে: দেহের ওজন কমাতে এ বীজের জুড়ি নেই। পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলেই বীজটি ফুলে ওঠে। এরপর সেই পানি কিংবা নানা মসলা দিয়ে তা সুস্বাদু করে পান করা যায়। তোকমার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া এর নানা উপাদান দেহের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, যা বাড়তি ক্ষুধা দূর করে এবং পেট দীর্ঘক্ষণ পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি দেয়।
দেহের তাপ কমায়: তোকমা গরমকালে দেহের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। আর এ কারণে গরম আবহাওয়ার দেশগুলোতে বহু মানুষ তোকমার শরবত পান করে। এটি সুস্বাদু করার জন্য চিনি, মধু এবং কোথাও কোথাও নারিকেল দুধ দেয়া হয়।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ: রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর তোকমা। মূলত দেহের বিপাকক্রিয়া ধীর করে দেয় তোকমা। ফলে কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজে রূপান্তরের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস যাঁদের রয়েছে, তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন।
কোষ্টকাঠিন্য দূর করে: কোষ্টকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকর তোকমা। সামান্য তোকমা অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর তা দুধে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এটি হজমের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে।
অ্যাসিডিটি দূর করে: তোকমা অ্যাসিডিটি দূর করতেও কার্যকর। এটি পেটের অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে জ্বালাপোড়া দূর করে। এ জন্য পানিতে সামান্য তোকমা বীজ ভিজিয়ে রেখে পান করতে হবে। তোকমার বীজ পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, যা দেহের ক্ষতিকর পদার্থও দূর করতে সহায়ক।
সুস্থ ত্বক ও চুল: ত্বকের নানা সমস্যায় তোকমা ব্যবহার করা যায়। এ জন্য কিছু তোকমা বীজ গুঁড়ো করে তা নারিকেল তেলের সঙ্গে মাখিয়ে ত্বকে লাগাতে হয়। এটি নানা চর্মরোগ নিরাময়ে কাজ করে। এটি একজিমা ও সোরিয়াসিস নিরাময়ে কার্যকর। সুস্থ চুলের জন্য এটি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
ঠাণ্ডার সমস্যায়: তোকমা বীজে রয়েছে ঠাণ্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি আপনার দেহকে ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়তে সহায়তা করবে। সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে চাইলে তাই নিয়মিত তোকমা খাওয়া যেতে পারে।
সতর্কতা: গর্ভবতী নারীদের দেহের ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে তোকমা। তাই গর্ভবতী নারী ও শিশুদের তোকমা খাওয়া উচিত নয়। ভালোভাবে পানিতে গুলিয়ে না খেলে এটি পেটে ফুলে যেতে পারে। এতে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, এমনকি শিশুদের শ্বাসরোধও হতে পারে।
যারা স্বাস্থ্যসচেতন তাদের কাছে তোকমা দানা বেশ পরিচিত। ফালুদা তৈরিতে এবং বিভিন্ন ফলের জুসে তোকমা দানা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তোকমা দানা প্রচুর পুষ্টি ও মিনারেল সমৃদ্ধ। ছোট ডিম্বাকৃতির নরম বীজটি `সালভিয়া হিসপানিকা` নামেও পরিচিত। বাদামি, কালো, সাদা বিভিন্ন রঙয়ের হয়ে থাকে এই তোকমা।
এক কাপ পরিমাণ তোকমা দানা থেকে প্রতিদিন আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ম্যাংগানিজের ৩০%, ক্যালসিয়ামের ১৮% পাওয়া যায়। প্রতি একশ গ্রাম তোকমা দানায় ভিটামিন-বি, ফোলেইট, ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, থিয়ামিন, দস্তা, ফসফরাস, পর্যাপ্ত পরিমাণে লৌহ এবং রিবোফ্ল্যাভিন রয়েছে।
চমৎকার পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার তোকমা দানা। দীর্ঘক্ষণ নিজেকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে চাইলে বাদাম, শুকনো ফল আর এক মুঠো তোকমা দানা মিশিয়ে খেয়ে নিন। এটি অসময়ে ক্ষুধার যন্ত্রণা, ক্ষুধা দমন, অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত রাখে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানান, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অল্প পরিমাণ তোকমা দানা রাখলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপাক প্রক্রিয়াও বৃদ্ধি করে থাকে।তোকমা দানায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম তোকমা দানায় ৪০ গ্রাম খাদ্য আঁশ পাওয়া যায়। আঁশ হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পেটের পীড়া উপশম, প্রদাহ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে তোকমা।
পেটের প্রদাহ, পীড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সহ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে এই তোকমা। শরীরের জন্য খুবই দরকারী একটি উপাদান ওমেগা-৩। আর তোকমা দানা হচ্ছে এই উদ্ভিদভিত্তিক ওমেগা অ্যাসিডের সবচেয়ে ভালো উৎস।
তোকমা দানা শরীরে শক্তি উৎপন্ন করে। আর এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহ, ক্যানসার কোষ প্রতিরোধ এবং বার্ধক্য রোধে সহায়তা করে থাকে। তোকমা দানায় হাইড্রোফোলিক উপাদান থাকায় খুব সহজে পানি শোষণ করে। এটি ওজনের চেয়ে প্রায় বারোগুণ বেশি পানি শোষণ করতে সমর্থ।
সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, তোকমা দানা দেহের জন্য উপকারী কোলেস্টেরল উৎপাদন করে থাকে। এছাড়াও রক্তে চর্বির পরিমাণ কমানো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট সুস্থ এবং হাড় গঠনে সাহায্য করে থাকে গুণে ভরা এই তোকমা।
যেভাবে পান করবেন তোকমার বীজঃ
১ টেবিল চামচ পরিমাণ তোকমার বীজ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তোকমা অবশ্যই ৭/৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর ফুলে উঠলে তারপর সেবন করুন। ঠিক মত ফুলে না উঠলে পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে।-সকালে এই পানি ফুলে ওঠা তোকমা বীজ সহ পান করে নিন খালি পেটে। সাথে ১ চা চামচ খাঁটি মধু যোগ করতে পারেন।
তোকমার এই শরবত সারাদিন আপনার মেটাবোলিজম বা বিপাক ক্রিয়ার হার বেশি রাখবে, ফলে খাবার ভালোভাবে হজম হবে ও বাড়তি ক্যালোরি জমে থাকবে না। এছাড়াও অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করবে তোকমা। নিয়মিত তোকমার শরবত পান করার পাশাপাশি অতিরিক্ত মিষ্টি ও ভাজাভুজি খাবার অভ্যাস ত্যাগ করলে বিনা পরিশ্রমেই দেহ হবে ছিপছিপে। বিশেষ করে মেদ ভুঁড়ির সমস্যা একেবারেই চলে যাবে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যাও উপশম হবে।
ওজন কমানো ছাড়াও তোকমার শরবত হতে যে উপকারগুলো পাওয়া যাবে– গরম কালে তোকমার শরবত ভেতর থেকে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে।– তোকমা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।– নিয়মিত তোকমার শরবত সেবন করলে ঠাণ্ডা ও মৌসুমি জ্বরের সমস্যা হয় না।– তোকমা লিভারকে ভালো রাখে।
সতর্কতা-গর্ভবতী নারী ও শিশুরা চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত তোকমা সেবন করা উচিত নয়।
তথ্য সূত্র:ঔষধি গাছে জীবন বাঁচে- ডাঃ শেখর রায় (বিভাস প্রকাশন, মে ২০১৪)
No comments:
Post a Comment